কুমিল্লা ইপিজেডের বিষাক্ত পানিতে হুমকির মুখে হাজারো মানুষ

ফরহাদ চৌধুরী :

কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) বিষাক্ত কেমিক্যাল, তরল বর্জ্য, শ্রমিকদের মলমূত্র ও দূষিত কালো রংয়ের পানি বাহিরে প্রবাহিত হয়ে আশপাশের নিচু জমি, খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের পানিতে মিশছে। বর্জ্যরে কালো পানি থেকে বাতাসে উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে জমিতে ফসলের উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি জলজ উদ্ভিদ এবং খাল-বিলের নানা প্রজাতির দেশিয় মাছ মরে যাচ্ছে।

দূষিত হচ্ছে পানি, মাটি ও বায়ু। জমিতে কাজ করতে গিয়ে চর্ম ও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষজন। জমির কালো পানিতে কাজ করতে চান না দিনমজুররা। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দক্ষিণাংশ এবং সদর দক্ষিণ এলাকার কৃষক ও নানা শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের দাবি- ‘তারা নিজেদের বর্জ্য নিজেরা নিয়ন্ত্রণে রাখেন, এখানকার কোন বর্জ্য কিংবা দূষিত পানি কোথাও যাচ্ছে না, শহরের পানি ও বর্জ্য এসব এলাকায় যাচ্ছে।’

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার কুমিল্লা সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজের পেছনের কৃষি জমি, জলাশয়- বিলের পানি ও লালমাই উপজেলার দত্তপুর এলাকার খালের কালো পানি কালো দেখা গেছে। লাকসামের ডাকাতিয়া নদীর অংশেও একই অবস্থা। বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ইপিজেডের পাশের এলাকাগুলো হলো নেউরা, ঢুলিপাড়া, লক্ষীনগর, দিশাবন্দ, কাজীপাড়া, হীরাপুর, মোস্তফাপুর, শ্রীভল্লবপুর, রামপুর, উনাইশার, যাত্রাপুর, লহিপুরাসহ আশ-পাশের এলাকা।

কুমিল্লা বেপজা সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বরে ইপিজেডের দক্ষিণ প্রান্তে বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপনের কাজ শুরু হয়ে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর শেষ হয়। এতে ব্যয় হয় ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বর্জ্য পরিশোধনাগারটি রাসায়নিক ও জৈবিক উভয় পদ্ধতিতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধন করতে পারে।

তবে এর উল্টো বক্তব্য এলাকার ভূক্তভোগীদের। কুমিল্লা সিটির কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমান সুরুজ জানান, ইপিজেডে বর্জ্য পরিশোধন হয়ে থাকলে বাহিরের খালে ও জলাশয়ে বিষাক্ত ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্য/পানি আসে কোথায় থেকে। তারা (বেপজা) এসব বিষাক্ত পানি ও বর্জ্য শহর থেকে যায় বলে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। তাই ঈদ উল আযহার পর এ বিষয়ে বেপজা কর্তৃপক্ষকে সরজমিনে এসে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের এ সমস্যা দেখার জন্য আবেদন করা হবে বলেও তিনি জানান।

সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘ইপিজেডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে গত দশ বছর ধরে কথা বলে আসছি। জেলা ও উপজেলা উন্নয়ন সভা ও আইনশৃঙ্খলা সভায়ও অনেকবার বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘এলাকাবাসীর এ সদস্যা দীর্ঘদিনের, তাই এ বিষয়ে বেপজা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে কুমিল্লা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ইপিজেডের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। এতে কারখানাগুলো কেন্দ্রীয়ভাবেই বর্জ্য পরিশোধনের সুযোগ পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা প্রতিনিয়ত এসে এটি পরিদর্শন করছেন। আমরা নিজেদের বর্জ্য নিজেরা নিয়ন্ত্রণে রাখি। এখান থেকে বর্জ্য কোথাও যাচ্ছে না।’

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
error: ধন্যবাদ!